Code

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Second Header

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

Tuesday, September 15, 2015

কেমন আছো তুমি - পঞ্চম পর্ব

তবে সব সময় এটা নতুন কিছু পাওয়ার গল্প নয়। কিছু ফিরে পাওয়ার গল্পও বটে। আর তার মধ্যেই ফিরে আসে "কেমন আছো তুমি"-এর আড্ডা। কথা গল্প হয়ে যায়। ভাষা হয়ে যায় আবেগ। ছোট্ট পাপনকে কেউ কোনোদিন জিজ্ঞেসই করল না এই কথা। পাপনও কি ঠিক "বড়দের মত কষ্ট পায়?"

আমরা আমাদের ছোট্ট সময়টা পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু ওর তো এখনও অনেক কিছু বাকি। এমনিতে পড়াশোনায় ভালো, খারাপ রেজাল্ট কখনও করেনি। সাধারণ ছেলে যেমন হয়। কিন্তু এই সাধারণ "শব্দ"টা কি ওর জন্য যথাযথ? কেনই বা আমরা ওকে অসাধারণ বললাম না? মোটামুটি রেজাল্ট করে বলে? মা-বাবার প্রত্যাশাকে ছুঁতে পারে না বলে? দিনরাত বাড়িতে "এটা করবে না, ওতে হাত দেবে না, ওখানে যাবে না, ওই দিকে তাকাবে না" এই সব শুনতে হয় বলে? বারবার চেষ্টা করেও আঁকাটা ঠিক রপ্ত করতে পারছে না বলে? নাকি, একের বেশি মাস্টারমশাই দিয়েও মা-বাবা তার মধ্যে মনের মতন প্রতিভা দেখতে পাচ্ছেন না বলে?

হয়ত উত্তরটা পাপনের মা-বাবাই বলতে পারবেন। তবে আজকের গল্প তাদের নিয়ে নয়। পাপনকে নিয়ে। পাপনের খুব রাগ হয়। ক্লাস ফোরে পরে, কিন্তু এই বয়সেই মুখ ফুলিয়ে রাগ দেখায়। তবে মা বাবার সামনে দেখাবার সাহস নেই। তাই আয়নার সামনে ঠোঁট আর গাল ফুলিয়ে নিজেকে দেখে, আর নিজের ওপর ওর খুব রাগ হয়। সত্যিই আশ্চর্যের! এই বয়সে ছেলেমানুষের রাগ হবে বকুনি দেওয়া মাস্টারমশাই এর ওপর, সেই পিয়নের ওপর যে রোজ দেরী করে ছুটির ঘণ্টা বাজায়, রাগ হয় তুতুল আর মনামির ওপর - তারা টিফিন ভাগ করে খায় না বলে, রাগ হয় সেই কাকুটার ওপর যে রোজ আইসক্রিম এর গাড়ি নিয়ে ঘোরে কিন্তু তাকে ছাড়া সবাই কে দেয়; তবে সব চেয়ে বেশি রাগ হয় ওর অঙ্কের ওপর। "কেন মিছামিছি একটা ছেলের জীবন বরবাদ করলে তুমি,অঙ্ক?" ভাবে সারাক্ষণ।

এই দুপুরবেলার দিকে, মা বাইরের বাসন-কোশন মাজা নিয়ে বসলেই পাপনের "গল্প" শুরু হয়। দরজাটা আসতে করে ঠেলে দিয়ে ঢুকে যায় শোবার ঘোরে। বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মনের কথা বলে আরেক বন্ধুকে, যদিও তাকেও প্রায় তার মতই দেখতে; তফাৎ হল যে সে আয়নার ওপারে থাকে। কত রকম কথা পাপনের। "আজ ইস্কুলে কান ধরে দাঁড়িয়েছিলাম। মাস্টারমশাই বকুনি দিয়েছে। পুরো মিছামিছি। 'তোমার প্রিয় প্রাণীর নাম কি?' সবাই বলল কুকুর ,বিড়াল, ময়না, টিয়া, গরু, খরগোশ। আমি কি খারাপ করেছিলাম "মানুষ" বলে? ঠাম্মি তো মানুষই। আমি ঠাম্মিকে খুব ভালবাসি। মানুষও তো প্রাণী- ম্যাডাম তো পড়িয়েছিলেন ক্লাসে। আমার যদি মানুষকে ভালো লাগে, কথা বলে ভালো লাগে, তো ক্ষতিটা কি? কেউ বোঝে না।" হয়ত নিখাত সত্যি। সবাই বকুনি দেয়, আদর করে, ভালবাসে , মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে "কি, দাদুভাই, ভাল আছো তো?" পাপন ভাবে, "সবাই আগেই ভেবে নিল কেন যে আমি ভালো আছি? কই তো জিজ্ঞেস করল না কেমন আছো দাদুভাই?" পাপন একবার 'পাকামি' করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল "এই চলে যাচ্ছে!"- তাও আবার নিমন্ত্রন বাড়িতে দাদু, দিদা, ঠাম্মি, পিসেমশাই সবার সামনে। শুনে সবাই "হো হো" করে হেসেছিল। বাড়িতেও এর জন্য ধোলাইও কম হয়নি।

পাপন কিন্তু তাই বলে দমে যাবার পাত্র নয়। যতই টিউশন থাকুক, পড়ার রুটিন অথবা মা-বাবার চোখ রাঙ্গানি, পাপনের এমন অনেক কিছু আছে যা ওকে অনেক ভালো রাখতে পারত। পাপন ভালবাসত আঁকতে। কিন্তু কই? আঁকার টিচার তো রোজ বলে "তোমার দ্বারা কিসসু হবে না"। কিন্তু পাপনের মতে "রঙটাই তো আসল। ছবিতে আবার পেন্সিলের আঁকিবুঁকি কেন?" তুলি নিয়ে রং ভরে যা ইচ্ছে তাই করত কাগজে। আর ভালো লাগত ঘুড়ি। ইস্কুলের মাঠে কত ছোট ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ায়, ঘুড়ি ধরে। ওকে লাটাই ধরতে দিলেই খুশি। সুতোর আলগা টানে ঘুড়ি উড়ে যেত অনেক দূরে। ক্লাসে থাকলেও মন পরে থাকত মাঠে। তারপর ছিল স্যারের বকুনি "জানও? তোমার বাবা যদি জানতে পারেন তুমি 'ওই সমস্ত' ছেলেদের সাথে দিনরাত হা হা হি হি করছ, তাহলে আস্ত রাখবেন তোমাকে?" পাপন তো বোঝেই না 'ওই সমস্ত' ছেলেরা তার থেকে কিভাবে আলাদা? ওরাও ঘুড়ি ভালবাসে, সেও ভালবাসে। এতে তফাৎ এল কোথায়? ও হ্যাঁ, ডায়েরি লেখার কথা ভুলে গেছি। ওটা শেষ জন্মদিনে ঠাম্মা দিয়েছিল, "দাদুভাই, সব লিখে রেখো এতে চুপিচুপি। আর শেষ হয়ে গেলে আবার দেবো।"

যত রাজ্যের ঝঞ্ঝাট, পাশের বাড়ির কুকুর, চিড়িয়াখানার সেই বড় সজারু, ঘুড়ি কাকু, মিষ্টির দোকান, ক্রিকেট খেলা, কাদাজল, জামায় খেলতে গিয়ে দাগ, রাতের ধোলাই, বাবা মায়ের ঝগড়া, নাক উঁচু বদমাশ পিসি, বিদঘুটে কাকার মোটা ছেলে, খেলনার ভেঙ্গে যাওয়া, বিড়াল ছানা, দেশলাই এর বাক্স- আরও কত কিছু নিয়ে পাতার পর পাতা আজব সাহিত্য (যাকে নেহাত ছেলেমানুষি বলাই চলে)। ও হ্যাঁ! এখনও বলা বাকি, কান্না।

পাপন একলা বসে কাঁদে। "মন খারাপের ঘর" এটাই নাম দিয়েছে উপরের ছাদের ট্যাঙ্কের কাছে প্লাস্টিকের ছাউনিকে। কেউ মারেনি, বকেনি, তবু বসে কাঁদে। কাঁদে কারণ কেউ ও কি চায় সেটাই বোঝে না।

আর হয়ত সেই ভেবেই একদিন ইস্কুল থেকে আর ফিরল না।

(ক্রমশ প্রকাশ্য, পড়তে থাকুন। পরবর্তী অংশ পরের প্রকাশনায়।)

ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক-নবপত্রিকা

No comments:

Post a Comment